গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই মানুষগুলো নিয়মিত প্রশংসা কুড়াচ্ছেন। দেশের এ দুযোর্গপূর্ণ অবস্থাতেও তাদের এ আত্মত্যাগ, কাজকে সবাই শ্রদ্ধা ও সম্মান দেখাচ্ছেন।
এর বাইরের অনেকের অনেক গল্পই রয়ে যাচ্ছে আমাদের অজানা। যাদের গল্প সচারাচর কোনো সংবাদের পাতায় আসে না, আসে না সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন পোস্টে। পায় না বাহবা বা প্রশংসার কুড়ানোর মতো সম্মান বা অনুপ্রেরণা। অনেকটা আড়ালে আবডালেই থেকে যায় তাদের গল্প, করে যায় তাদের নিজেদের কাজ।
আজ বলব একজন বিক্রয় প্রতিনিধির গল্প। তিনি এঞ্জেলা সিজুকা। ব্র্যাক ডেইরি এন্ড ফুড প্রজেক্টের বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে। একজন খাদ্য দ্রব্য বিক্রয় প্রতিনিধি হওয়ায় এই সময়টাতেও কাজ করতে হয়েছে।
এঞ্জেলা সিজুকার মা একজন ডায়াবেটিক এবং কিডনি রোগী। এমন পরিস্থিতিতে মাকে একা ফেলে হলেও তাকে কাজে যেতে হয়েছে তাকে।
নিজের সাথে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধকে পরাজিত করে তিনি বেরিয়ে পড়ছিলেন কাজে। দিনটি ২৬ মার্চ, ২০২০। রাস্তায় গণপরিবহন বন্ধ থাকায় সিদ্ধান্ত নিলেন হেঁটেই অফিসে যাওয়ার। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও মাস্ক ও গ্লাভস পরে বাসা থেকে ছইয়-সাত কিলোমিটার পথ হেঁটে পৌছালেন অফিসে।
দেড় ঘণ্টার কান্তিকর পথ তখনো শেষ হয়নি। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে দোকানের তালিকা ও খাবারের প্যাকেট হাতে নিয়ে চললেন সরবরাহের কাজে।
করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউন থাকায় সংক্রমণ এড়াতে গত এক মাস ধরে বিক্রয় প্রতিনিধিদের বাজারে আসা বন্ধ। তাই তাকে দেখে দোকানীদের কৌতুহলী জিজ্ঞাসা, “আপা! আপনি একলা একটা মেয়ে মানুষ, করোনার মধ্যে বাজারে আসছেন কেন?”
কাজের প্রতি দায়িত্বশীলতা থেকে এঞ্জেলা সিজুকা ছুটি নিতে চাননি। তিনি মাঠ পর্যায়ে কাজ করে পণ্যের যোগান না দিলে বাজারের প্যাকেটজাত দুধের ঘাটতি দেখা দিতে পারত। সুবিধাবাদী ব্যবসায়ী অথবা, সিন্ডিকেটের কারণে রমজান মাসে প্যাকেটজাত দুধের মূল্য বৃদ্ধি পাক তা তিনি চাননি।
ঝুঁকিপূর্ণভাবে কাজ করায় তার থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে বলে নিয়েছিলেন বাড়তি সর্তকতা। লকডাউনের প্রথমদিন থেকেই মায়ের বাড়িতে ছিলেন সিজুকা। একই এলাকাতে শ্বশুড়বাড়ি হওয়ার পরেও তার থেকে করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে বলে যাননি সেখানে।
সিজুকার মতো এমন অসংখ্য মানুষ প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন আড়ালে আবডালে। খবরে প্রচার কিংবা বিজ্ঞাপণে তারা বিশ্বাসী নন। সিজুকার মতো নারীদের হাত ধরেই এগিয়ে যাবে বিশ্ব, সবুজ হবে এই ধরা।
রাফসান নিঝুম (১৭), ঢাকা