করোনাভাইরাস বাংলাদেশে বহু জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই ঘরবন্দি রাখছেন নিজেকে। আমিও সারাদিন বাসায়ই থাকছি। দেশে চলছে অঘোষিত লকডাউন। অবসর সময় যেন আর কাটছেই না। যাদের দিনের বেশির ভাগ সময়ই বাসার বাইরে ব্যস্ততায় কাটত তারা আজ বাড়িতেই থাকতে বাধ্য হচ্ছে। আমি একজন শিক্ষার্থী। আমার আগে প্রতিদিন সকালে স্কুল, বিকালে টিউশন, সন্ধার পরে স্কুলের পড়ায় ব্যস্ত থাকতে হত। একটা ছুটির দিনের জন্য কত অপেক্ষায় থাকতাম! কবে শুক্রবার বা ছুটি আসবে। ছুটির দিন অনেক দেরি করে ঘুম থেকে উঠব, বাসায় আম্মুকে কাজে সাহায্য করব, সিনেমা দেখব। এসব ভেবেই কত আনন্দ পেতাম। এখন ছুটি। বন্ধ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু যেন কোনো আনন্দ নেই। এমন ছুটিতো আমরা কখনোই প্রত্যাশা করিনি। পাঠ্যবইকে কয়েক ঘণ্টা সময় দেওয়ার পরও রয়ে যায় অফুরন্ত সময়। সময়টুকু কাটানোর মতো যথেষ্ট কাজ নেই আমাদের কাছে। ঘোরাঘুরিরও কোনো সুযোগ নেই। তাই দিনকে দিন বিরক্ত হচ্ছি শুধু। আমি বাসায় থেকে নিজের কাজ খুঁজে নিতে চেষ্টা করি। বই পড়ে সময় কাটাতে চেষ্টা করি। যদিও আমার কাছে নতুন বই আর নেই, বাইরেও যেতে পারছি না। তাই যা ছিল তাই পড়েছি কয়েকদিন। ছুটিতে আমি বেশ কয়েটা সিনেমাও দেখেছি। নতুন ধরণের খাবার বানাতে চেষ্টা করি। ছোট বোনকে সাজাই, তাকে নিয়ে সময় কাটাই। তারপরও একঘেয়েমি লাগে। এই গৃহবন্দি জীবন হয়ত আমাদের অনেক কিছু শেখাচ্ছে। আমরা শখের বসে খাঁচায় বন্দি করে পাখি পালন করি, তাদের অনেক যত্নও করি। কখনো কি ভেবে দেখেছি তাদের এই বন্দি জীবনটা কেমন লাগে? আমরা চিড়িয়াখানায় অনেক পশু-পাখি দেখি। দেখতে আমাদের ভালোই লাগে, তবে ওই পশু পাখির বন্দি জীবনটা কেমন লাগে কখনো ভেবে দেখেছি কি? আমাদের ভাবনাগুলোতেও শুধুই আমরাই। আমরা কখনো নিজের বাইরে ভাবতে পারি না। কখনো এভাবে ভেবে দেখি না যে, আমি বিকেলে নতুন নতুন খাবার বানাচ্ছি আর আমার বয়সই কেউ হয়ত এসময় খেতে পারছে না। আমি বিকাল বেলাটা বাসার ছাদে গিয়ে সময় কাটাতে চেষ্টা করি। আমাদের দেশে হয়ত এমন অনেক বাড়ি আছে যাদের ছাদে যাওয়ারও ব্যবস্থা নাই। স্কুল বন্ধ থাকায় আমাদের পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হচ্ছে এটা তো সবাই ভাবি। কিন্তু স্কুল বন্ধ থাকায় আমাদের স্কুলের সামনে ঝালমুড়ি, ফুচকা বা চটপটি বিক্রি করে যে সংসার চালাত, স্কুল বন্ধ থাকায় তার কতটা ক্ষতি হচ্ছে এটা ভেবে দেখি না। এসব ভাবলে নিজের কষ্টগুলো তখন অনেক কমে যায়। এই গৃহবন্দি জীবনের শিক্ষাগুলো যেন আমরা ভুলে না যাই। এই দুর্যোগ কেটে গেলে যেন নতুন পৃথিবীতে নতুন করে আবার ভাবতে পারি। যে ভাবনাগুলো থাকবে শুধু নিজের জন্য নয়, থাকবে সকলের জন্য।
নূশরাত ইসলাম তৃষা (১৪), বাগেরহাট