এ দিবসের মূল উদ্দেশ্যে হচ্ছে এমন একটি সমাজ তৈরি করা যেখানে প্রত্যেক নারীর পিরিয়ডের সময়টা সুস্থ ও নিরাপদে কাটানোর অধিকার থাকবে।
মে মাসের এই নির্দিষ্ট তারিখে দিবসটি পালন করার পেছনে একটি বিশেষ কারণ আছে। কারণ সাধারণত মেয়েরা প্রতি মাসে পাঁচ দিন পিরিয়ডের মধ্য দিয়ে যায়। আর মে হচ্ছে বছরের পঞ্চম মাস। প্রতি পিরিয়ডের মাঝে সাধারণত ২৮ দিন করে যায়, তাই ২৮ তারিখটি বেছে নেওয়া হয়েছে।
মূলত বয়সন্ধিকাল থেকে একজন নারীর পিরিয়ড হয়ে থাকে। মাসের একটি নির্দিষ্ট সময়ে শুরু হয়ে দুই থেকে সাতদিন এই চক্র প্রাকৃতিক নিয়মে চলমান থাকে। কিন্তু এখনও বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু দেশে ‘পিরিয়ডকে’ একটি স্বাভাবিক ব্যাপার হিসেবে দেখা হয় না। এই স্বাভাবিক নিয়মটিই সামাজিক রক্ষণশীলতার কারণে হয়ে ওঠে সংকোচ, লজ্জার। জনসম্মুখে এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলা আজও আমাদের দেশে বিভ্রান্তকর।
এখন পর্যন্ত এই বিষয়টিকে সামাজিক ট্যাবু করে রাখা হয় বলে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়।
পিরিয়ড চলাকালীন একজন নারী হরমোনজনিত কারণে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটে। এছাড়াও তাকে নানা ধরনের ঝামেলা পোহাতে হয়। রাস্তাঘাটে সাবধানে চলাফেরা থেকে শুরু করে, বাড়ি পর্যন্ত তাকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। কোনো পুরুষ যেন বুঝতে না পারে যে মেয়েটি তার জীবনের একটি খুব স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মধ্যে মাসের দিনগুলো অতিবাহিত করছে, এই নিয়ে এক মানসিক প্রেসারেও থাকতে হয় তাকে।
পিরিয়ডের দিনগুলোতে তীব্র পেটে ব্যথা, কোমর ব্যাথ্যা ইত্যাদি হয়ে থাকে। এছাড়াও কিছু হরমোনজনিত পরিবর্তনের কারণে সংবেদনশীল মানসিকতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় তাদের। এসময় বিষণ্নতা, খিটখিটে ভাব, রাগ হওয়া ইত্যাদি অনুভব করেন তারা।
এখনো বিশ্বজুড়ে স্বাভাবিক পিরিয়ড নিশ্চিত হয়নি। এর পেছনে বহু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে একটা কারণ হচ্ছে অনেক মেয়েকেই পিরিয়ডের ব্যাপারে সঠিক তথ্য দেওয়া হয় না। তাই প্রথম পিরিয়ডের সময় মেয়েরা পিরিয়ডকে কোনো অসুখ মনে করে ভয় পেয়ে যায়। নিজেদেরকে একা আর অসহায় মনে করে।
পিরিয়ড বিষয়ে নারীদের মধ্যে বিভিন্ন কুসংস্কার ও রক্ষণশীলতার কারণে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতসহ ঘরে বাইরে প্রতিনিয়তই নারীরা সম্মুখীন হচ্ছে বিড়ম্বনার।
বেসরকারি এক সংস্থার একটি জরিপে দেখা গেছে, পিরিয়ডকলীন পরিচ্ছন্নতার অভাবে দেশের ৯৭ শতাংশ নারী কোনো না কোন সময়ে সার্ভিক্যাল ইনফেকশনের সমস্যায় ভোগে। পিরিয়ডজনিত জটিলতার কারণে প্রতি মাসে গড়ে ছয়দিনে কাজে অনুপস্থিত থাকে গার্মেন্টেসে কর্মরত নারীরা।
পিরিয়ড নিয়ে নারীরা নানা ধরনের ব্যঙ্গ, হাস্যরসাত্মক ও বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখিন হয়। এ বাস্তব উদাহরণগুলো অহরহ আমাদের চোখে পড়ে। এর পেছনে যেমন সমাজের অবস্থা দায়ী, এর পাশাপাশি দায়ী শিক্ষাক্ষেত্রে পিরিয়ড সংক্রান্ত সঠিক তথ্যগুলো বইয়ের অন্তর্ভুক্ত না করা।
এখন পর্যন্ত নারীরা দোকানে স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে সংকোচবোধ করেন। তাই চক্ষুলজ্জার কারণে অনেকেই নিজে দোকানে গিয়ে স্যানিটারী ন্যাপকিন কিনতে চায় না। কোন নারী দোকানে স্যানিটারী ন্যাপকিন কিনতে গেলে দোকানদার তার দিকে আড়চোখে তাকায় না, এমন ঘটনা খু্ব কম।
পিরিয়ড নিয়ে আমরা সকলে মুক্তভাবে আলোচনা করতে পারছি না বলেই, আজও আমরা নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছি, সংকোচে ভুগছি, চক্ষুলজ্জাকে মেনে নিচ্ছি।
আমাদের দেশের বেশিরভাগ নারী আজও প্রজনন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। পিরিয়ড নিয়ে কোনো কথা হলেই, আমরা সেটিকে ‘মেয়েদের ব্যাপার’ বলে চেপে রাখি। বাইরের মানুষ তো দূরে থাকুক, পরিবারের সদস্যদের সাথেই এ বিষয়ে কথা বলতে সংকোচবোধ করি। কিন্তু এটি কি সমাধান? আসুন, সকলে একসাথে সচেতন হই। সুস্থ ও সচেতন পরিবেশ নারীদের জন্য নিশ্চিত করতে পারলেই, নিরাপদে থাকবে নারীরা ও এগিয়ে যাবে সকল সংকোচকে উপেক্ষা করে।