আজ এই ধুলাবালি আর কংক্রিটের শহরে নিজেকে একা মনে হয়, খুব একা। রেখে আসা প্রিয়দের জন্য বুকের ভেতরটা যেন দাউদাউ করে পুড়ছে।
একদিন মা ফোনের ওপাশ থেকে কেঁদেই ফেললেন। বললেন, ‘আমার ছেলেটা কাছে নেই বলে বুকের মধ্যে যেন কেমন কেমন করছে।’
আমি বললাম, মা তুমি কেঁদো না। আমি তো ফিরব আবার। আমি এখানে একটুও কষ্টে নেই, সুখেই আছি মা।
কিন্তু মা সুখে থাকার এই মিথ্যে অভিনয় ধরে ফেললেন। বললেন, বাবা তুই আমার কাছে তোর কষ্টগুলা লুকাচ্ছিস! আমি জানি তুই ঠিকমতো খেতে পারিস না, ঘুমাতে পারিস না।
মায়ের এসব কথা শুনতে শুনতে আমার চোখেও জল চলে আসে। যন্ত্রণাটুকু চাপা রেখেই শেষে বললাম আমার জন্য শুধু দোয়া কর মা।
আর বাবা প্রতিদিন প্রায় ৩-৪ বার ফোন করে শুধু শুধু জিজ্ঞাসা করবেন, ‘বাবা কেমন আছিস? ঠিকমতো খেতে পারিস? শরীরটা ঠিক আছে তো? নিয়মিত পড়ালেখা চলছে? প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরেই বাবাকে শুধু হ্যাঁ বলে দেই। কারণ বাবাকে আমার দুঃখের কথা বলে কষ্টে রাখতে চাই না। কারণ তিনিও আমার মতো বাড়ি ছাড়া। কাজের সূত্রে বাবা ময়মনসিংহ থাকেন।
এদিকে ছোট বোন দুটির স্মৃতিও আমায় পীড়া দেয়। দুয়ের মধ্যে তামান্না বড় এবং তিশা ছোট। তিশার বয়স মাত্র দেড় বছর। আর তামান্না আমার থেকে দেড় বছরের ছোট। ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলা, ঝগড়াবিবাদ, মারামারি সব কিছুর সঙ্গী তামান্না। আর তিশা সবে ভাইয়া ভাইয়া বলে ডাকতে শিখেছে।
শহর থেকে খুব ইচ্ছে হয় তিশা আর তামান্নার ভাইয়া ডাকটা শুনি। তাদের ছেড়ে আজ আমি যেন অসম্পূর্ণ। সত্যি কথা বলতে গিয়ে তাদের সবাইকে ছেড়ে আমি একটুও ভালো নেই। ভালোবাসার টানে ইচ্ছে করে আবার চলে যাই গ্রামে। সুখে থাকি এই প্রিয়দের নিয়ে। কিন্তু আবেগ দিয়ে কি আর সব হয়?