Opinions Stories About Engagement Reports Join Now
Join U-Report, Your voice matters.
STORY
বাল্যবিয়ে থামছে কি?

বাল্যবিয়ে শহর অঞ্চলে কমল হলেও গ্রামে এখনও রয়ে গেছে। এখনও লুকিয়ে নানা জায়গায় বাল্যবিয়ে হচ্ছে।

তেমনি একটি অভিজ্ঞতার কথা লিখতে বসেছি। ঈদের ছুটিতে গ্রামে যাওয়ার পর থেকে শুনছি নানান জায়গায় বিয়ে হচ্ছে। কিন্তু কোনো গান বাজনা নেই। গান বাজনাবিহীন রাতের অন্ধকারে বিয়ে। বিয়ে মানে গান বাজনা আনন্দ উল্লাসে এলাকাবাসীর আরামের ঘুম হারাম করে দেওয়া। কিন্তু এমন ম্যাড়ম্যাড়ে বিয়ে দেখে আমার কেমন একটু সন্দেহ হলো।

এরই মধ্যে আমি মামার সাথে বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার দাওয়াত পাই। উপহারসহ হাজির হয়ে যাই বিয়ের দিন। বিয়ে বাড়িতে যেয়ে দেখি অতিথিরা খাচ্ছেন, উপহার দিচ্ছেন, চলে যাচ্ছেন। বর কিংবা কনের কোন খোঁজ নেই। অতিথিও খুব বেশি নয়।

কাজি, বিয়ের গেট এগুলো না থাকায় কেমন জানি বিয়ে বিয়ে মনে হচ্ছে না। বিষয়টি মনের মধ্যে খোঁচা দিচ্ছিল। তাই পরিচিত এক ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম, বর কনে কোথায়? বিয়ে হবে না নাকি?

ভাই জানালেন বিয়ে এক সপ্তাহ আগে হয়ে গেছে। মেয়ের বয়স কম তাই রাতে বিয়ে হয়েছে এবং এক সপ্তাহ পর আজ আনুষ্ঠানিকতা পালন করে খাওয়া দাওয়া হচ্ছে।

আমার খারাপ লাগাতে শুরু করল এবং কেন অল্প বয়সে বিয়ে দিচ্ছে তা জানতে ইচ্ছে হল। এর মধ্যে বউকে দেখতে পেলাম। দেখে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। মেয়েটিকে আমি চিনি। ওর আমার চেয়ে কমপক্ষে তিন বা চার বছরের ছোট হবে। পড়ে সপ্তম শ্রেণিতে।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে বাড়িতে আসলেও বিষয়টা বারবার মনের মধ্যে নাড়া দিচ্ছিল। আমার মায়ের কাছে রাতের অন্ধকারের বিয়ে সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন পরিবারের সম্মতিতে গ্রামবাসীর অজান্তে রাতে বিয়ে হয়। তার কয়েক দিন পর আনুমানিক এক সপ্তাহ পর গ্রামের মানুষদের নিয়ে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে। এভাবেই নাকি এখন গ্রামগুলোতে বাল্যবিয়ে হচ্ছে।

জন্মনিবন্ধন কার্ডে বয়স বেশি করে দিয়ে কখনও বিয়ে হয় আবার কাজী অনুপস্থিতিতে এলাকার মাওলানা বা ইমাম দিয়েও বিয়ে হচ্ছে। গত কয়েক মাসে নাকি এমন অনেক বিয়ে হয়েছে।

এই বিয়ে দেওয়ার দুইটি প্রধান কারণ অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা ও অভিভাবকদের অসচেতনতা। দুটো মিলে এক একটা  মেয়ের জীবন নরকে পরিণত হচ্ছে।

গ্রামের অধিকাংশ মানুষ মেয়েকে পরিবারের বোঝা ভাবেন। যার ফলে অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেন। বিয়ের পর পরই সন্তান জন্ম দিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে আরও অসহায় হয়ে যায় মেয়েরা।

এই অভিনব কায়দায় বিয়ে হওয়ার কথা শুনে ঘাবড়ে গেলাম। সরকার যখন বাল্যবিয়ে ঠেকাতে কঠোর হচ্ছে ঠিক তার বিপরীতে গ্রামের মানুষ ঠিকই উপায় বের করে ফেলছে। এজন্য কঠোর মনিটরিং দরকার বলে আমি মনে করি। প্রশাসনকে নজরদারি বাড়াতে হবে। নয়ত এভাবে চলতে থাকলে গ্রামের অবস্থা, সমাজের অবস্থা, দেশের অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারন করবে।


শাহিন আলম (১৭), সাতক্ষীরা

See by the numbers how we are engaging youth voices for positive social change.
EXPLORE ENGAGEMENT
UNICEF logo